বুঝিয়ে বলা (কবিতা) – সুকুমার রায় Bujhiye bola poem Shukumar Ray
ও শ্যামাদাস ! আয়তো দেখি, বোস তো দেখি এখেনে,
সেই কথাটা বুঝিয়ে দেব পাঁচ মিনিটে, দেখে নে ৷
জ্বর হয়েছে ? মিথ্যে কথা ! ওসব তোদের চালাকি—
এই যে বাবা চেঁচাচ্ছিলি, শুনতে পাইনি ? কালা কি ?
মামার ব্যামো ? বদ্যি ডাকবি ? ডাকিস না হয় বিকেলে
না হয় আমি বাৎলে দেব বাঁচবে মামা কি খেলে !
আজকে তোকে সেই কথাটা বোঝাবই বোঝাব—
না বুঝবি তো মগজে তোর গজাল মেরে গোঁজাব ৷
কোন্ কথাটা ? তাও ভুলেছিস্ ? ছেড়ে দিছিস্ হাওয়াতে ?
কি বলছিলেম পরশু রাতে বিষ্টু বোসের দাওয়াতে ?
ভুলিসনি তো বেশ করেছিস্, আবার শুনলে ক্ষেতি কি ?
বড় যে তুই পালিয়ে বেড়াস্, মাড়াস্নে যে এদিক্ই !
বলছি দাঁড়া, ব্যস্ত কেন ? বোস্ তাহলে নিচুতেই—
আজকালের এই ছোক্রাগুলোর তর্ সয়না কিছুতেই ৷
আবার দেখ ! বসলি কেন ? বইগুলো আন্ নামিয়ে—
তুই থাক্তে মুটের বোঝা বইতে যাব আমি এ ?
সাবধানে আন্, ধরছি দাঁড়া–সেই আমাকেই ঘামালি,
এই খেয়ছে ! কোন্ আক্কেলে শব্দকোষটা নামালি ?
ঢের হয়েছে ! আয় দেখি তুই বোস্ তো দেখি এদিকে—
ওরে গোপাল গোটাকয়েক পান দিতে বল্ খেঁদিকে ৷
বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,
অর্থাৎ কিনা লাগ্ছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে—
গোড়ায় তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি ক’রে,
রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে ৷
অর্থাৎ কিনা, এই মনে কর্, রোদ পড়েছে ঘাসেতে,
এই মনে কর্, চাঁদের আলো পড়লো তারি পাশেতে—
আবার দেখ ! এরই মধ্যে হাই তোলবার মানে কি ?
আকাশপানে তাকাস্ খালি, যাচ্ছে কথা কানে কি ?
কি বল্লি তুই ? এ সব শুধু আবোল তাবোল বকুনি ?
বুঝতে হলে মগজ লাগে, বলেছিলাম তখুনি ৷
মগজভরা গোবর তোদের হচ্ছে ঘুঁটে শুকিয়ে,
যায় কি দেওয়া কোন কথা তার ভিতেরে ঢুকিয়ে ?—
ও শ্যামাদাস ! উঠলি কেন ? কেবল যে চাস্ পালাতে !
না শুনবি তো মিথ্যে সবাই আসিস্ কেন জ্বালাতে ?
তত্ত্বকথা যায় না কানে যতই মরি চেঁচিয়ে—
ইচ্ছে করে ডান্পিটেদের কান ম’লে দি পেঁচিয়ে ৷