গন্ধ বিচার (কবিতা) ‐ সুকুমার রায় Gondho bicher poem
সিংহাসনে বস্ল রাজা বাজল কাঁসর ঘন্টা,
ছট্ফটিয়ে উঠল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা ৷
বল্লে রাজা, মন্ত্রী তোমার জামায় কেন গন্ধ ?
মন্ত্রী বলে, এসেন্স দিছি—গন্ধ তো নয় মন্দ !
রাজা বলেন, মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি,
বদ্যি বলে, আমার নাকে বেজায় হল সর্দি ৷
রাজা হাঁকেন, বোলাও তবে রাম নারায়ণ পাত্র,
পাত্র বলে, নস্যি নিলাম এক্ষুনি এইমাত্র ৷
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক গন্ধ কোথায় ঢুকবে ?
রাজা বলেন, কোটাল তবে এগিয়ে এস, শুঁকবে ৷
কোটাল বলে, পান খেয়েছি মশলা তাতে কর্পূর,
গন্ধে তারি মুণ্ড আমার এক্কেবারে ভরপুর ৷
রাজা বলেন, আসুক তবে শের পালোয়ান ভীমসিং,
ভীম বলে, আজ কচ্ছে আমার সমস্ত গা ঝিম্ ঝিম্ ৷
রাত্রে আমার বোখার হল বলছি হুজুর ঠিক বাৎ,
ব’লেই শুল রাজসভাতে চক্ষু বুজে চিৎপাত ৷
রাজার শালা চন্দ্রকেতু তারেই ধ’রে শেষটা,
বল্ল রাজা, তুমিই না হয় কর না ভাই চেষ্টা ৷
চন্দ্র বলেন, মারতে চাও তো ডাকাও নাকো জল্লাদ,
গন্ধ শুঁকে মরতে হবে এ আবার কি আহলাদ ?
ছিল হাজির বৃদ্ধ নাজির বয়সটি তার নব্বই,
ভাবল মনে, ভয় কেন আর একদিন তো মরবই ৷
সাহস ক’রে বল্লে বুড়ো, মিথ্যে সবাই বক্ছিস,
শুঁকতে পারি হুকুম পেলে এবং পেলে বক্শিস ৷
রাজা বলেন, হাজার টাকা ইনাম পাবে সদ্য,
তাই না শুনে উৎসাহেতে উঠল বুড়ো মদ্দ ৷
জামার পরে নাক ঠেকিয়ে—শুঁকল কত গন্ধ,
রইল অটল দেখল লোকে বিস্ময়ে বাক্ বন্ধ ৷
রাজ্যে হল জয়–জয়কার বাজল কাঁসর ঢক্কা,
বাপরে কি তেজ বুড়োর হাড়ে পায় না সে যে অক্কা ?