চোর-ডাকাত (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম
কে তোমায় বলে ডাকাত বন্ধু, কে তোমায় চোর বলে?
চারিদিকে বাজে ডাকাতি ডঙ্কা, চোরেরি রাজ্য চলে!
চোর-ডাকাতের করিছে বিচার কোন্ সে ধর্মরাজ?
জিজ্ঞাসা কর, বিশ্ব জুড়িয়া কে নহে দস্যু আজ?
বিচারক! তব ধর্মদন্ড ধর,
ছোটদের সব চুরি ক’রে আজ বড়রা হয়েছে বড়!
যারা যত বড় ডাকাত-দস্যু জোচ্চোর দাগাবাজ
তারা তত বড় সম্মানী গুণী জাতি-সঙ্ঘেতে আজ।
রাজার প্রাসাদ উঠিছে প্রজার জমাট রক্ত-ইঁটে,
ডাকু ধনিকের কারখানা চলে নাশ করি কোটি ভিটে।
দিব্যি পেতেছো খল কলও’লা মানুষ-পেষানো কল,
আখ-পেষা হয়ে বাহির হতেছে ভুখারী মানব-দল!
কােটি মানুষের মনুষ্যত্ব নিঙাড়িয়া কলওয়ালা
ভরিছে তাহার মদিরা-পাত্র, পুরিছে স্বর্ণ-জালা!
বিপন্নদের অন্ন ঠাসিয়া ফোলে মহাজন-ভুঁড়ি
নিরন্নদের ভিটে নাশ ক’রে জমিদার চড়ে জুড়ি!
পেতেছে বিশ্বে বণিক-বৈশ্য অর্থ-বেশ্যালয়,
নিচে সেথা পাপ-শয়তান-সাকি, গাহে যক্ষের জয়!
অন্ন, স্বাস্থ্য, প্রাণ, আশা, ভাষা হারায়ে সকল-কিছু,
দেউলিয়া হয়ে চলেছে মানব ধ্বংসের পিছু পিছু।
পালাবার পথ নাই,
দিকে দিকে আজ অর্থ-পিশাচ খুঁড়িয়াছে গড়খাই।
জগৎ হয়েছে জিন্দানখানা, প্রহরী যত ডাকাত__
চোরে-চোরে এরা মাস্তুত ভাই, ঠগে ও ঠগে স্যাঙাৎ।
কে বলে তোমায় ডাকাত, বন্ধু, কে বলে করিছ চুরি!
চুরি করিয়াছ টাকা ঘটি বাটি, হৃদয়ে হাননি ছুরি!
ইহাদের মত অমানুষ নহ, হ’তে পার তস্কর,
মানুষ দেখিলে বাল্মীকি হও তোমরা রত্নাকর!