বোধন (কবিতা) – কাজী নজরুল ইসলাম
১
দুঃখ কী ভাই, হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥
কেঁদো না, দমো না, বেদনা-দীর্ণ এ প্রাণে আবার আসিবে শক্তি,
দুলিবে শুষ্ক শীর্ষে তোমারও সবুজ প্রাণের অভিব্যক্তি।
জীবন-ফাগুন যদি মালঞ্চ-ময়ূর তখতে আবার বিরাজে,
শোভিবেই ভাই, ওই তো সেদিন, শোভিবে এ শিরও পুষ্প-তাজে॥
২
হোয়ো না নিরাশ, অজানা যখন ভবিষ্যতের সব রহস্য,
যবনিকা-আড়ে প্রহেলিকা-মধু, – বীজেই সুপ্ত স্বর্ণ শস্য!
অত্যাচার আর উৎপীড়নে সে আজিকে আমার পর্যুদস্ত,
ভয় নাই ভাই! ওই যে খোদার মঙ্গলময় বিপুল হস্ত!
দুঃখ কী ভাই, হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥
৩
দুদিনের তরে গ্রহ-ফেরে ভাই সব আশা যদি না হয় পূর্ণ,
নিকট সেদিন, রবে না এদিন, হবে জালিমের গর্ব চূর্ণ!
পুণ্য-পিয়াসী যাবে যারা ভাই মক্কার পূত তীর্থ লভ্যে;
কণ্টক-ভয়ে ফিরবে বা তারা বরং পথেই জীবন সঁপবে।
দুঃখ কী ভাই, হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥
৪
অস্তিত্বের ভিত্তি মোদের বিনাশেও যদি ধ্বংস-বন্যা,
সত্য মোদের কাণ্ডারি ভাই, তুফানে আমরা পরোয়া করি না।
যদিও এ পথ ভীতি-সংকুল, লক্ষ্যস্থলও কোথায় দূরে,
বুকে বাঁধো বল, ধ্রুব-অলক্ষ্য আসিবে নামিয়া অভয় তূরে।
দুঃখ কী ভাই, হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥
৫
অত্যাচার আর উৎপীড়নে সে আজিকে আমরা পর্যুদস্ত,
ভয় নাই ভাই! রয়েছে খোদার মঙ্গলময় বিপুল হস্ত!
কী ভয় বন্দি, নিঃস্ব যদিও, অমার আঁধারে পরিত্যক্ত,
যদি রয় তব সত্য-সাধনা স্বাধীন জীবন হবেই ব্যক্ত!
দুঃখ কী ভাই হারানো সুদিন ভারতে আবার আসিবে ফিরে,
দলিত শুষ্ক এ মরুভূ পুন হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে॥