সবলা (কবিতা) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন :—

নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার

কেন নাহি দিবে অধিকার

   হে বিধাতা?

   নত করি মাথা

পথপ্রান্তে কেন রব জাগি

ক্লান্তধৈর্য প্রত্যাশার পূরণের লাগি

দৈবাগত দিনে।

শুধু শূন্যে চেয়ে রব? কেন নিজে নাহি লব চিনে

সার্থকের পথ।

কেন না ছুটাব তেজে সন্ধানের রথ

দুর্ধর্ষ অশ্বেরে বাঁধি দৃঢ় বল্‌গাপাশে।

দুর্জয় আশ্বাসে

দুর্গমের দুর্গ হতে সাধনার ধন

কেন নাহি করি আহরণ

প্রাণ করি পণ।

যাব না বাসরকক্ষে বধূবেশে বাজায়ে কিঙ্কিণী —

আমারে প্রেমের বীর্যে করো অশঙ্কিনী।

বীরহস্তে বরমাল্য লব একদিন

সে লগ্ন কি একান্তে বিলীন

ক্ষীণদীপ্তি গোধূলিতে।

কভু তারে দিব না ভুলিতে

মোর দৃপ্ত কঠিনতা।

বিনম্র দীনতা

সম্মানের যোগ্য নহে তার,

ফেলে দেব আচ্ছাদন দুর্বল লজ্জার।

দেখা হবে ক্ষুব্ধ সিন্ধুতীরে;

তরঙ্গগর্জনোচ্ছ্বাস মিলনের বিজয়ধ্বনিরে

দিগন্তের বক্ষে নিক্ষেপিবে।

মাথার গুণ্ঠন খুলি কব তারে, মর্তে বা ত্রিদিবে

একমাত্র তুমিই আমার।

সমুদ্র-পাখির পক্ষে সেইক্ষণে উঠিবে হুংকার

পশ্চিম পবন হানি,

সপ্তর্ষি-আলোকে যবে যাবে তারা পন্থা অনুমানি।

হে বিধাতা, আমারে রেখো না বাক্যহীনা,

রক্তে মোর জাগে রুদ্র বীণা।

উত্তরিয়া জীবনের সর্বোন্নত মুহূর্তের ‘পরে

জীবনের সর্বোত্তম বাণী যেন ঝরে

  কণ্ঠ হতে

নির্বারিত স্রোতে।

যাহা মোর অনির্বচনীয়

তারে যেন চিত্ত-মাঝে পায় মোর প্রিয়।

সময় ফুরায় যদি, তবে তার পরে

শান্ত হোক সে-নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের নিস্তব্ধ সাগরে।

 

কাব্যগ্রন্থঃ মহুয়া।

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতার আড্ডায় আপনার স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন।