উপাখ্যান – সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
সাবিত্রী ! তোমাকে দেখলাম কাল বহুদিন পরে।
সূর্য সবেমাত্র শেষ, চৌরঙ্গির অন্ধকারে
জীবনবীমার ঘড়ি জ্বলে ওঠেনি তখনও
দেশী মানুষের হাতে অনেক বিদেশ ঘুরে,
ফিরে আসা জাহাজের গোপন সম্ভার, দেখলে মনে হয়
বড় সুসময়! তুমি দুচোখে ভ্রমর নিয়ে
একা, একা নও একাকিনী, অন্যমনস্ক দাঁড়িয়েছিলে।
কিন্তু দেখছিলে না কিছুই । (প্ৰথমে লিখলাম ‘একা’
তারপর ওই নিঃসঙ্গ শব্দকে না-কেটেই-লিখলাম
‘একাকিনী’। কেন না আমার মনে হল তুমি নির্বাসিত, শুধু,
জনকনন্দিনী নও, রাক্ষস শহর তোমাকে প্রকাশ্যে
দাঁড় করিয়ে রেখেছে সূর্যের নিবন্ত অবেলায়!’)
কবে, কতদিন আগে এই চোখ থেমেছিল তোমার দু-চোখে,
হাত ছুঁয়ে ছিল আষাঢ়মেঘের মতো আর্দ্র কেশপাশ, শুধু
শরীর ছোঁয়নি, কেন-না তখন অকালবর্ষণে বড় ভয়
মনে হত শস্য নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি ধাক্কা দিয়েছিলে
যেমন ঝড়ের আগে ধাক্কা মারে ঈশান বাতাস,
বাসাবড়ি কেঁপে ওঠে, দরজা জানালা শান্তিতে সন্ত্রস্ত হয়,
তুমি গোপন মণির মতো আমার অক্ষর নিয়ে তেমনই মাতাল
সহমরণের শাস্তি দিতে চেয়ে খুলে দেখিয়েছিলে তাজমহল
অমন সমাধি উরু, ভাঁজে উড়ে এসে বসেছিল
হাজার মৌমাছি, তুমি দুষ্টু বালিকার ফুল ছেঁড়ার সমান হিংসায়
ওষ্ঠ থেকে ছিঁড়ে নিয়েছিলে প্রথম পুরুষ ভাষা ;
চিৎকার করে বলেছিলাম, ‘সাবিত্রী ওখানে শরীর নেই
কোন সত্যবান কবিতার সম্ভাব্য শরীর।’
সেইদিন থেকে আমি বন্দী, সেই থেকে আমি অসম্পূর্ণ
যবন মহিষ ছত্রাকার মাংস ধ্বংস করে কেবলই ভেবেছি
বল, পৃথিবী কেমন দেখলে?