Ami krishnokoli mahato poem lyrics আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো (কবিতা)
আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো এম.এ, পি.এইচ.ডি.
আমার গা অমাবস্যা
আমার চুল মেষ পালকের ফাল্গুন
আমার পিঠ সাঁওতাল পরগনা
আমার দুটো থাই –
একটা বাঁকুড়া, একটা পুরুলিয়া।
আমি গড়িয়াহাটার মেয়েদের মতো
আরশোলা দেখলে ভয়ে পালিয়ে আসিনা
বোমায় বাঁ’হাত উড়ে যাওয়া বাবা কতবার
আমার বই পুড়িয়ে দিয়েছে,
কতবার আমার দুঃখী মা বলেছে
মেয়েদের বড়ো হতে নেই।
মা আমি ইউরোপ থেকে ডাক পেয়েছি
এই দেখো ইমেল,
দলিত সম্মেলনে আমি পেপার পড়তে চলেছি
মা আমি তোমার আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো এম.এ, পি.এইচ.ডি.
আমি যার কাছে পি.এইচ.ডি. করতাম
সেই প্রফেসর আমাকে
রায় চকে নিয়ে যেতে চাইলেন,
আমি বললাম কেন রায় চক কেন?
উনি বললেন –
রায় চকে না গেলে পি.এইচ.ডি. পূর্ণ হয় না,
আমি বললাম –
কেন আমি আপনার ফ্ল্যাটে যেতে পারি,
উনি আঁৎকে উঠে বললেন –
না না আমার বাড়ি না
আমার পি.এইচ.ডি. এক বছর পিছিয়ে গেলো।
আমি ফোন করলাম –
স্যার আমি রায় চকে যাবো,
হোটেলের ঘরে তিনি আমার
মুকুটমণিপুরে হাত দিলেন,
আমার সাঁওতাল পরগনার হুক খুলে ফেললেন,
হাঁ হয়ে দেখতে থাকলেন –
আমার বাঁকুড়া, আমার পুরুলিয়া,
আমার দুই অগ্নি গোলকের কাছে
মুখ নিয়ে এলেন,
তখনি চিৎকার –
আগুন আগুন আগুন আমি পারবো না,
সেদিন আমার প্রফেসর আমাকে
ফেলে পালিয়ে গেলেন।
আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো এম.এ, পি.এইচ.ডি.
কত কষ্ট করে,
কত অপমান সহ্য করে,
জঙ্গলে রাত জেগে বই পড়ে
আমি এখানে এসেছি,
কেউ আমাকে জায়গা ছেড়ে দেয়নি
কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দেয় না,
না পুরুলিয়ায়, না কলকাতায়।
মা আমি চেকিং করে ভেতরে এলাম
মা আমি ইমিক্রিয়েশনে দাঁড়িয়ে,
বাবা কে দেখে রেখো
মানুষটার একটা হাত নেই।
অফিসার আমার নাম উচ্চারণ করলেন –
কৃষ্ণকলি মাহাতো ..
আমি বিমানের সিড়ি দিয়ে উঠছি মা
বিমান সেবিকা আমাকে মেডাম বললো,
আমাকে আমার নাম্বারে নিয়ে গিয়ে বসালো
আমি সিটবেল্ট বেঁধে ফেললাম,
প্লেন রানওয়ে ধরে দৌড়াতে শুরু করেছে
দৌড়, দৌড়, দৌড়
কি গতি, কি তেজ, কি আওয়াজ।
আমার মনে হলো
বিমান রানওয়ে ধরে দৌড়োচ্ছে না
দৌড়োচ্ছি আমি, আমি, আমি
আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো এম.এ, পি.এইচ.ডি.
আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো।