Ekjon terorister chithi Kobita একজন টেরোরিস্টের চিঠি – সুবোধ সরকার

প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন :—
প্রিয়তমাসু
আমি তিনদিন খাইনি। কেউ কোনও খাবার দিয়ে যায়নি।
কী করে দেবে? গুহার বাইরে প্রচন্ড বরফ পড়ছে।
যে কোনও দিন আমি গুলিতে মারা যাব। যে কোনও দিন
তুমি টিভির পর্দায় আমার মুখ দেখতে পাবে।আমি
গুহার ভেতর সারারাত কম্পিউটরের সামনে বসে। কতদিন
আমি বকুল ফুলের গন্ধ পাইনি। কতদিন আমি গরম রুটি
খাইনি। কতদিন আমি তোমার ঘাসে হাত দিইনি।
কালো ঘাস। আঃ! ভাবলেই চে গুয়েভারা ছুটে বেড়ায়
শরীরে। স্টালিনকে হাতের মুঠোয় ধরে বসে থাকি।
তার মুখ দিয়ে গরম বেরিয়ে আসে। আঃ, গরম।
আমার স্টালিন ভালো আছে। তোমার সাইবেরিয়া?
হা,হা,হা… এখানে কেউ আমার জন্মদিন কবে
জানে না।

আমি পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। অধ্যাপক বাবার ছেলে।
কম্পিউটরে আমার চাইতে কেউ ভাল ছিলনা। আজ আমি
গুহায় বসে আছি।কিন্তু কেন? প্রিয়তমাসু,মাই লাভ,তুমি
এর উত্তর পাবে যদি অত্যাচারের ইতিহাস পড়ো। কত হাজার
কোটি ডলার খরচ করে ওরা গরিবকে আরও গরিব
করে চলেছে। ১১ বছরের একটি
বালককে একটি পাউরুটি কিনে দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তোর কি হয়েছে রে? সে গোগ্রাসে পাউরুটি কামড়
দিয়ে বলেছিলঃ আমার বাবা-মাকে ওরা পুড়িয়ে
দিয়েছে,জ্যান্ত। ছেলেটা খেতে খেতে কর গুনছিল,
বাবা-মা, দুই ভাই, তিন বোন…এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ…
হ্যাঁ, এগারো জন। ছেলেটার নাম বলব না। কে খোঁজো। আজীবন
খুঁজে যাও।

প্রিয়তমা, আমাকে আর বেশি দিন ওরা বাঁচিয়ে রাখবেনা।
তার আগেই আমি ওদের দু’দুটো ঘাঁটি উড়িয়ে দেব।
ওদেরতো পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, ওরা
আবার জন্মায়, আবার গনতন্ত্র বানায়, আবার পার্লামেন্টে
যায়।আবার প্রেস মিট করে। একটা সত্যি কথা লিখি,
ওরা গনতন্ত্র দিয়ে যা করায়, আমরাও AK-47 কে,
দিয়ে তাই তাই করাই। ওদেরটা দোষ নয়, আমাদেরটা দোষ।
আমি মারা যাব। তার আগে একবার, যদি
একবার তোমাকে দেখতে পেতাম। তোমার হাত ধরতে
পারতাম।যদি একবার তোমার ভেতরে ঢুকতে পারতাম, যেভাবে
বরফ ঢোকে গুহায়,যেভাবে শিকড় ঢোকে পাথরে,যেভাবে
ভাইরাস ঢোকে কম্পিউটরে।

আজ আমি একজন টেররিস্ট। হয়তো এটাই আমার শেষ চিঠি।
বলতো,কেন আমার মত ছেলে টেররিস্ট হবে?
কেন আমি ঘর-বাড়ি ছেড়ে,মায়ের হাতের খাবার ছেড়ে,
ভাল চাকরী ছেড়ে;গুহার জীবন,জঙ্গলের জীবন,
বরফের জীবন বেছে নিলাম?

আমি মাতাল হতে পারতাম।লম্পট হতে পারতাম। একজন
মাতালকে মেনে নেয় সমাজ। একজন লম্পটকে মেনে নেয় রাষ্ট্র।
একজন মাফিয়া বিধায়ককে মেনে নেয় এসেম্বলি। কিন্তু
একজন টেররিস্টকে মেনে নেয়া যায়না।
কতদিন তোমার স্নান করা চুলের গন্ধ পাইনি।
চোখ ভরে আসে জলে। পাউরুটি খাওয়া শেষ করে
১১ বছরের ছেলেটি বলেছিল,আর আছে? আমি আর
একটা পাউরুটি কিনে দিয়ে বলেছিলাম; শোন্ তুই বড় হয়ে
কী করবি? সে বলেছিলঃ বদলা নেব।
ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠে যেই মনে হয় আমার সামনে
অনেক অনেক কাজ। অনেকগুলো খারাপ কাজ। ভুল
বললাম,অনেক,অনেক,ভালো কাজ।

আমাকে ক্ষমা করো। মা’কে একবার দেখে এসো। বোকা মেয়েটা
আমার মা হয়ে কোনও অন্যায় করেনি।

ইতি-
কোন নাম নেই

পুনশ্চঃ আমি মরে গেলে, আমাকে তুমি ‘আকাশ’ বলে ডেকো।

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতার আড্ডায় আপনার স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন।