Tin paharer sopno kobita তিন পাহাড়ের স্বপ্ন – বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পাহাড়িয়া মধুপুর, মেঠো ধূলিপথ
দিনশেষে বৈকালি মিষ্টি শপথ;
‘মােহনিয়া বন্ধু রে! আমি বালিকা
তােরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।’
‘আজও সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা;
আমি শােব, পাশে মাের কেউ শােবে না-
তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’
সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলায়;
সাঁওতাল মেয়ে-ক’টি দৃষ্টি ভুলায়
দিন শেষ-ধুধু মাঠ-ধুধু মেঠো পথ
সাঁওতাল মেয়ে ক’টি ছড়াল শপথ!
হাওয়ায় হাওয়ার মতাে তাদের শপথ।
২
(ধীরে মাদল)
আয় মিতেনি, আজ রাতে
চাঁদ কুড়ানাে মাঝ রাতে
আবছা আলাের কান্নাতে
মখ রেখে তুই ঝরনা ধারে আয়
আয় জোয়ানের মন-জ্বালা
নাচ দিয়ে সই, গাঁথ মালা-
চুমুর গেলাস মদ ঢালা
দে ছুঁড়ে দে, তিন পাহাড়ের গায়ে।
(জোরে মাদল)
আহা মাদল, মাতাল মাদল বাজছে তােরই জন্যে লাে!
খুশির হাওয়া, পাগলা হাওয়া গান দিল রাজকন্যে লাে!
আয়, কাছে আয়, মন দে লাে!
৩
চোখ কেন তাের কাপছে মেয়ে
বুক কেন তাের দুলছে?
গাল দুখানি লালচে, শরীর
সাপের মতােই ফুলছে?
কাকে মারবি ছােবল লাে?
কোন্ ছেলে তাের কী করল।
মাদল ভেবে কেউ কি তােকে
আজকে বাজাল ?
ফুল দিয়ে নয়, ফাগ ছড়িয়ে
বিকেল সাজাল ?
কেমন দিবি সাজা রে ?
আর যাবি না পাহাড়ে!
8
এত গান আকাশে
এত গান বাতাসে।
সাঁওতাল মেয়েটির টিপ কপালে
ছেলেটি পেছন তবু নিল কী-বলে ?
রাঙা ফুল মেয়েটির খোঁপায় জ্বলে
ছেলেটি বাজাল বাঁশি তবুকী-বলে?
এত মদ আকাশে
এত মদ বাতাসে।
নেশা যেন ধরে যায় ছেলেটির বাঁশিতে
মনে হয় দোষ নেই ভালােবাসা-বাসিতে
তবে চাঁদ সরে যাও, যাও তা হলে …
‘ও ছেলে পেছন তুই নিলি কী-বলে ?’
‘পথ ভুলে গেছি মেয়ে খিলখিল হাসিতে
শােন্, কোনাে দোষ নেই ভালােবাসা-বাসিতে।’
এত আলাে আকাশে
এত আলাে বাতাসে!