বর্ণমালা আমার দুঃখীনি বর্ণমালা কবিতা – শামসুর রহমান

প্রিয়জনের কাছে শেয়ার করুন :—

Bornomala amar dukhini bornomala বর্ণমালা আমার দুঃখীনি বর্ণমালা কবিতা

 

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছ আমার সত্তায়।

মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়

ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে

শিউলীশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ বলে মদনমোহন

তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,

অবিচ্ছিন্ন, পরস্পর মমতায় লীন,

ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই

ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।

 

আজন্ম আমার সাথী তুমি,

আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,

তাই তো ত্রিলোকে আ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে

আমারই বন্দরে।

 

গলিত কাচের মতো জলে ফাৎনা দেখে দেখে রঙিন মাছের।

আশায় চিকন ছিপ ধরে গেছে বেলা। মনে পড়ে, কাঁচি দিয়ে

নকশা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে

সেই কবে আমি ‘হাসিখুশি’র খেয়া বেয়ে

পৌঁছে গেছি রত্নদ্বীপে কম্পাস বিহনে।

 

তুমি আসো, আমার ঘুমের বাগানেও

সে কোন বিশাল

গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে নেমে আসো,

আসো কাঠবিড়ালির রূপে,

ফুল্ল মেঘমালা থেকে চকিতে ঝাঁপিয়ে পড় ঐরাবত সেজে,

সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ

মুখের মতোই দুলে দুলে ওঠো তুমি

বারবার কিংবা টুকটুকে লঙ্কা-ঠোঁট টিয়ে হয়ে

কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।

 

আমার স অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।

যুদ্ধের আগুনে,

মারীয় তাণ্ডবে,

প্রবল বর্ষায়

কি অনাবৃষ্টিতে,

বারবনিতার

নূপুর নিক্বণে,

বনিতার শান্ত

বাহুর বন্ধনে

ঘৃণায় ধিক্কারে,

নৈরাজ্যের এলো-

ধাবাড়ি চিৎকারে,

সৃষ্টির ফাল্গুনে

হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে।

 

তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার?

উনিশশো’ বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি

বুকে নিয়ে আছ সগৌরবে মহীয়সী।

সে-ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হলে আমার সত্তার দিকে

কত নোংরা হাতের হিংস্রতা ধেয়ে আসে।

এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি,

এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউরের পৌষমাস!

তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।

 

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

কবিকল্পলতা অনলাইন প্রকাশনীতে কবিতার আড্ডায় আপনার স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি প্রকাশের জন্য আজ‌ই যুক্ত হন।