Hat poem by Jatindranath Sengupta হাট কবিতা – যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
দূরে দূরে গ্রাম দশ-বারোখানি, মাঝে একখানি হাট,
সন্ধ্যায় সেথা জ্বলেনা প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট।
বেচা কেনা সেরে বিকেল বেলায়
যে যাহা সবে ঘরে ফিরে যায়;
বকের পাখায় আলোক লুকায় ছাড়িয়া পুবের মাঠ;
দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে ওঠে দীপ-আঁধারেতে থাকে হাট।
নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা এক ক্লান্ত বকের পাখে;
মদীর বাতাস ছাড়ে প্রশ্বাস পার্শ্বে পাকুড়-শাখে।
হাটের দোচালা মুদিল নয়ান,
কারো তরে তার নাহি আহ্বান,
বাজে বায়ু আসি বিদ্রুপ-বাঁশি জীর্ণ বাঁশের ফাঁকে;
নির্জন হাটে রাত্রি নামিল একক কাকের ডাকে।
দিবসেতে সেথা কত কোলাহল চেনা-অচেনার ভীড়ে ;
কত না ছিন্ন চরণচিহ্ন ছড়ানো সে ঠাঁই ঘিরে।
মাল চেনাচিনি, দর জানাজানি,
কানাকড়ি নিয়ে কত টানাটানি;
হানাহানি ক’রে কেউ নিল ভ’রে, কেউ গেল খালি ফিরে।
দিবসে থাকে না কথার অন্ত চেনা-অচেনার ভিড়ে।
কত সে আসিল, কত বা আসিছে, কত না আসিবে হেথা ;
ওপারের লোক নামালে পসরা ছুটে এপারের ক্রেতা।
শিশির-বিমল প্রভাতের ফল,
শত হাতে সহি’ পরখের ফল-
বিকাল বেলায় বিকায় হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা।
হিসাব নাহি রে-এল আর গেল কত ক্রেতা-বিক্রেতা।
নূতন করিয়া বসা আর ভাঙা পুরানো হাটের মেলা;
দিবসরাত্রি নূতন যাত্রী, নিত্য নাটের খেলা
খোলা আছে হাট মুক্ত বাতাসে
বাধা নাই ওগো-যে যায় যে আসে,
কেহ কাঁদে, কেহ গাঁটে কড়ি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা।
উদার আকাশে মুক্ত বাতাসে চিরকাল একই খেলা॥