Na lekha kobita না লেখা কবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কুসুমের বুক থেকে ঝরে গেছে সব পবিত্রতা ; এই লাইনটা নিয়ে মহা মুস্কিলে পড়েছি। লিখেই মনে পড়ে, না না, আমি বলতে চাই স্ত্রীলােকের শরীর থেকে সব রূপ উবে গেছে। কিন্তু এ কথাটা কিভাবে লিখবাে বুঝতে না পেরে, কুসুমের বুক থেকে ঝরে গেছে ইত্যাদি। তখন মনে হয়—কেন, এভাবে ঘুরিয়ে লিখবাে কেন, সােজাসুজি লিখবাে, আমার কাকে ভয় ? কথাটা কি ভাবে জানাবাে ভাবতে বসি। ভাবতে-ভাবতে ঘুম পায়, মনে পড়ে—গড়িয়াহাটের ট্রাম লাইনের উপর দিয়ে পেত্নীরা শেয়ালের গলার বকলশ ধরে বেড়াতে বেরিয়েছি কলকাতা এই রকম—এ কথাও লিখতে হবে। কিন্তু লেখার সময় আসে কুসুম, রূপের বদলে পবিত্রতা। আমি কুসুম সম্বন্ধে কি জানি ? কিছুই না। পবিত্রতা সম্বন্ধেই বা কী জানি? তখন মনে হয় স্ত্রীলােকের সব রূপ উবে গেছে ? তাও কি জানি ? তবে কেন ঘন্টায় ষাট মাইল স্পীডে ছুটে যাওয়া একটি মেয়ের এক পলক মুখ দেখে এমন প্রেমে পড়ি যে সাতদিন আহারে রুচি থাকে না ? তবে কেন বেলা বারােটায় একটি মেয়েকে ঘুমােত দেখে এমন হঠাৎ অসহ্য কষ্ট হয়েছিল যে মনে হয়েছিল দীনের চেয়ে দীন হয়ে যাই, একবার হাঁটু মুড়ে ভিখারীর মতাে ওর হাতের স্পর্শ ভিক্ষে করি। সেইজন্যই কি কবিতাটা লিখতে গেলেই মনে পড়ে অন্য ? নিরীহ কুসুমের প্রতি অকারণ কপট ক্রোধ ? এইসব ভাবতে ভাবতে আমার কিছুই হয় না, বারবার ঘুম আসে। বরং যদি দুটো নিয়েই লিখতাম তবে দুটি কবিতা অন্তত লেখা হতাে। না হয় হতােই বা ওরা কন্ট্রাডিক্টারি। তার বদলে খেলাে লজিক আমাকে নিয়ে গেল মর্মান্তিক নিঃসঙ্গতার দিকে।