Rupai poem lyrics Jashim Uddin রূপাই কবিতা – জসীমউদ্দীন
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে, লম্বা মাথার চুল
কালাে মুখেই কালাে ভ্রমর, কিসের রঙীন ফুল।
কাঁচা-ধানের পাতার মত কচি মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া!
জালি-লাউয়ের ডগার মত বাহু দু’খান সরু;
গা’খানি তা’র শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু!
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গাে মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে লাজে লুকায় ভুলিয়ে আলাের খেল!
কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোন চাষী
মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তা’র হাসি।
কালাে চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি
কালাে দ’তের কালি দিয়েই কেতাব কোরান লেখি।
জনম কালাে, মরণ কালাে, কালাে ভূবনময়;
চাষীদের ওই কালাে ছেলে সব করেছে জয়।
সােনায় যে-জন সােনা বানায় কিসের গরব তা’র,-
রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।
কালােয় যে-জন আলাে বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারি পদ-রজের লাগি, লুটায় বৃন্দাবন।
সােনা নহে, পিতল নহে, নহে সােনার মুখ,
কালাে বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে-কালাে তার মাঠেরি ধান, যে-কালাে তাঁর গাঁও,
সেই কালােতে সিনান করি উজল তাহার গাও।
আখড়াতে তা’র বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি।
‘জারী’র গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
‘শাল-সুন্দী’ বেত যেন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়ােরা কয়- “ছেলে নয়, ও ‘পাগাল’ লােহা যেন।
রূপাই যেমন বাপের বেটা কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রূপাই, -রূপার চেয়ে দামী,
এক কালেতে ওরই নামে সব গা হবে নামী।”
খুব সুন্দর