Kather chair poem lyrics কাঠের চেয়ার কবিতা – অমিতাভ দাশগুপ্ত
কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
মানুষও একদিন কাঠ হয়ে যায়।
তার কোমর থেকে
সোঁদরি, গরান, গঁদের আঠা ঝরতে ঝরতে
একদিন তাকে পুরোপুরি এঁটে ধরে তক্তার সঙ্গে
কুর কুর কুর কুর
ঘুনপোকা ঘুরতে থাকে তার আশির-নখর,
কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে
একদিন পুরোপুরি কাঠ হয়ে যায় সে।
তখন কেউ তাকে চড় মেরে চলে যায়।
সে রাগে না।
সমর্পণ নিয়ে নারী এসে কাছে দাঁড়ায়।
সে কেঁপে ওঠে না।
টালমাটাল পায়ে শিশু ছুটে আসে।
সে দু হাত বাড়িয়ে দেয় না।
একটার পর একটা
কাঠ জুড়তে জুড়তে
সে এমন এক কাঠের চেয়ার এখন,
যার শরীরের সন্ধিতে
শুধু জং-ধরা পেরেকের গান,
একটানা করাত-চেরাইয়ের গান।
যে হাত একদিন সমুদ্র শাসন করত
তা এখন চেয়ারের দুই ভারী হাতল।
যার দুই উরুতে
একদিন টগবগ করত একজোড়া বাদামী ঘোড়া
আজ তার ডান পা কেটে নিল
বাঁ পা জানতে পারে না।
কাঠের অশ্রু নেই, স্বপ্ন নেই, নিদ্রা নেই, হাহাকার নেই।
একটু চেষ্টা করলেই
সে জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেত
ঢ্যাঙা কালো বেঁটে মাঝারি
উটের মত পরিশ্রমী মানুষ মানুষ আর মানুষ;
কিন্তু কাঠের চেয়ারের এই হল মুশকিল
সে জানালা অব্দি হেঁটে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
শুধু
কাঠের ভেতর লোহার পেরেক-আঁটা তার দুটো চোখ
বাকি জীবনভর
ছোটো চেয়ার থেকে মেজো চেয়ার
মেজ চেয়ার থেকে বড় চেয়ার হওয়ার
স্বপ্ন দেখতে থাকে।