Intensive Care Unit kobita ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট – সুবোধ সরকার
মাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রেখে বেরিয়ে এলাম
আমার কাঁধে এসে বসল একটা প্রজাপতি।
টাকা তুলতে বেরোলাম, অফিস বলল, রাইটার্স থেকে
লিখিয়ে আনুন, রাইটার্স বলল, মন্ত্রীকে বলুন,
মন্ত্রীর পি.এ. বললেন, আজ সকাল দশটায়
মন্ত্রীকেই ইনটেনসিভ কেয়ারে দিতে হয়েছে, পরে আসুন।
কিন্তু মাকে বাঁচাতে হলে টাকা দরকার।
প্রজাপতি এসে আর একটা কাঁধে বসল
ভাই প্রজাপতি, তুমি কিছু বলবে?
চেয়ারমান বোস একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন—
এই মহিলার কাছে যান, ইনি মুমূর্ষু মায়ের
যুবক ছেলেদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন
হাতে ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে যাবেন।
চেয়ারম্যান বোস বললেন, বয়েস হয়েছে আপনার মায়ের
কিছু মনে করবেন না, ডাক্তারকে বলে
ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সুইচটা বন্ধ করে দিন।
ঠিকই বলেছিলেন তিনি, কিন্তু রাইটার্স থেকে বেরিয়ে মনে হল
শুধু রাইটার্স নয়, সেন্ট্রাল এভিনিউ নয়, এপাশে হাওড়া ওপাশে শিয়ালদা
দুটো ক্ষয়ে যাওয়া ফুসফুস নিয়ে, গোটা কলকাতা একটা
বিরাট ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মধ্যে ধকধক করছে।
ঘাড়ে বসে থাকা প্রজাপতিকে বললাম, ভাই কিছু বলবে?
সে বলল, আমি আগে বিয়ে না হওয়া ছেলেমেয়েদের
আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। এখন মুমূর্ষুর কাঁধে বসে থাকি।
নগর উন্নয়ন মন্ত্রী খপ করে প্রজাপতিটাকে ধরে বললেনঃ
নিউইয়র্ক নয়, মস্কো নয়, টোকিও হংকং নয়
একমাত্র কলকাতাতেই এখনো প্রজাপতি পাওয়া যায়,
একমাত্র কলকাতাতেই।
এটাই হবে আমাদের পরবর্তী বিজ্ঞাপন।
আমি চোখ মুছে বললাম, ইনটেনসিভে শুয়ে থাকা আমার মায়ের কী হবে,
আমার মায়ের?