হাতুড়ে কবিতা সুকুমার রায় Hature kobita lyrics Shukumar Ray
একবার দেখে যাও ডাক্তারি কেরামৎ —
কাটা ছেঁড়া ভাঙা চেরা চট্পট্ মেরামৎ ৷
কয়েছেন গুরু মোর, “শোন শোন বৎস,
কাগজের রোগী কেটে আগে কর মক্স ৷”
উৎসাহে কি না হয় ? কি না হয় চেষ্টায় ?
অভ্যাসে চট্পট্ হাত পাকে শেষটায় ৷
খেটে খুটে জল হ’ল শরীরের রক্ত,
শিখে দেখি বিদ্যেটা নয় কিছু শক্ত ৷
কাটা ছেঁড়া ঠুক্ঠাক্, কত দেখ যন্ত্র,
ভেঙে চুরে জুড়ে দেই তারও জানি মন্ত্র ৷
চোখ বুজে চট্পট্ বড় বড় মূর্তি,
যত কাটি ঘ্যাঁস্ ঘ্যাঁস্ তত বাড়ে ফুর্তি ৷
ঠ্যাং–কাটা গলা–কাটা কত কাটা হস্ত,
শিরিষের আঠা দিয়ে জুড়ে দেই চোস্ত ৷
এইবারে বলি তাই, রোগী চাই জ্যান্ত—
ওরে ভোলা, গোটাছয় রোগী ধরে আন্ত !
গেঁটেবাতে ভুগে মরে ও পাড়ার নন্দী,
কিছুতেই সারাবে না এই তার ফন্দি—
একদিন এনে তারে এইখানে ভুলিয়ে,
গেঁটেবাত ঘেঁটে–ঘুঁটে সব দেব ঘুলিয়ে ৷
কার কানে কট্কট্ কার নাকে সর্দি,
এস, এস, ভয় কিসে ? আমি আছি বদ্যি ৷
শুয়ে কেরে ? ঠ্যাং–ভাঙা ? ধ’রে আন এখেনে,
স্ক্রুপ দিয়ে এঁটে দেব কি রকম দেখেনে ৷
গালফোলা কাঁদো কেন ? দাঁতে বুঝি বেদনা ?
এস, এস, ঠুকে দেই–আর মিছে কেঁদো না ৷
এই পাশে গোটা দুই, ওই পাশে তিনটে—
দাঁতগুলো টেনে দেখি—কোথা গেল চিমটে ?
ছেলে হও, বুড়ো হও, অন্ধ কি পঙ্গু,
মোর কাছে ভেদ নাই, কলেরা কি ডেঙ্গু—
কালাজ্বর, পালাজ্বর, পুরনো কি টাট্কা,
হাতুড়ির একঘায়ে একেবারে আট্কা !