বিদ্যাসাগর – শুভ দাশগুপ্ত
হে তেজোদ্দীপ্ত বঙ্গসন্তান।
আমাদের স্বভাব অনুসারে
আমরা তোমাকে পুজো করেছি।
আমাদের স্বভাব অনুযায়ী
আমরা তোমাকে ভগবান বানাতে চেয়েছি
হয়তো, পেরেওছি।
কান্নার সমুদ্র আজও উত্তাল
অজ্ঞানতার অন্ধকার আজও ভয়ঙ্কর
কর্মবিমুখ গড্ডালিকা আজও স্রোতস্বিনী।
আমরা এই ধোঁয়াশা ঘেরা শূন্যতায় দাঁড়িয়ে
তোমার কথা ভুলে
তোমার পুজো করি।
তোমার নামে লাইব্রেরি বা পথ বা সংগঠন গড়ি
উৎসব করি। আলোর বাহারে সাজাই মেলা
অন্ধকার যেমন ছিল—থেকে যায় তেমন-ই।
মাইলস্টোনের সংখ্যা পরিচয় তোমার অসামান্য মেধাকে স্মরণ করায়,
মায়ের ডাকে সাড়া দিতে তোমার ভয়হীন নদী পার হওয়া
তোমার অন্তরের মাতৃভক্তিকে তুলে ধরে।
তুমি আমাদের অন্ধকার ভেঙে আলোর বর্ণপরিচয়ে ধনী করেছো
তুমি আমাদের বিভ্রান্ত কবিকে স্বপথে এনেছো—তার হাত থেকে
আদায় করেছো ‘মেঘনাদবধ’।
তুমি গরিবের কান্নাকে তুলে নিয়েছো নিজের চোখের পাতায়।
তুমি বালবিধবার যন্ত্রণাকে পাথর করেছো নিজের বুকে
তুমি লুণ্ঠনকারী ইংরেজের মুখের ওপর তুলে দিয়েছো
স্পর্ধার চটিজুতো—আসমুদ্র হিমাচল ভারতবাসীর ক্রোধে।
আমরা তোমাকে ‘প্রথমভাগ’ আর ‘দ্বিতীয়ভাগে’ ভালোবেসেছি।
অক্ষরজ্ঞান সমাপ্ত করেই
আমরা চিনতে শুরু করেছি—সেইসব মহামন্ত্র
যাতে করে আখের গুছানো যায়।
আমরা কোনো এককালে
তোমাকে নির্বাসিত করেছি কার্মাটারে!
তোমার হৃদয়জোড়া ভালোবাসা আর চোখ ভরা জলকে
আমরা মূল্য দিইনি।
আজও বিধবার বিবাহ -সহজ হয়নি
আজও অশিক্ষা- অন্ধকারে অন্ধকারে ভয়াল।
সত্যিকারের বর্ণপরিচয় যা ধরা ছিল তোমার প্রতিদিনের
জীবনযাপনে,সে বর্ণপরিচয়ে আমরা পরিচিত হইনি।হতে চাইনি।
তুমি আমাদের ক্ষমা করো।