Tumi poem by Nirmalendu Gun তুমি (কবিতা) – নির্মলেন্দু গুণ
কী নাম তােমাকে দেবাে, কোমলগান্ধার নাকি
বসন্তের অন্ধকারে পথহারা পাখি।
কামনা তােমার নাম’—বলতেই লজ্জামাখা আঁখি
তুমি ঢেকেছাে আঙুলে; তারপর প্রেম এসে
চুপিচুপি চুলে যেই বসেছে তােমার,
‘বিদিশা-বিদিশা’ বলে আমিও আবার কাছে আসিয়াছি।
তােমার দুরন্ত দেহে ছুঁয়েছি বকুল।
সমুদ্রের ঝড়োরাতে অনায়াসে ভেসে যাওয়া খড়কুটো,
পাপের আঙুল, তুমি ফিরালে না কেন?
তুমি কি কখনাে চাও নাটোরের বনলতা হতে,
অথবা আমার রক্তে পদ্ম হয়ে ভাসতে মৃণাল?
কাছে এসাে প্রিয়তমা, কাছে এসাে প্রিয়া,
—বলে যেই নগ্ন হাতে ডেকেছি তােমাকে;
তুমি কেন পরিপূর্ণ হৃদয় সঁপিয়া প্রেমের দুর্বল লােভে
ঝাপ দিতে গেলে যৌবনের অনির্বাণ অসীম চিতায়?
কী নাম পছন্দ করাে, পদ্মাবতী নাকি ক্লান্তি,
কী নাম তােমাকে দেবাে? বলাে কোন্ নাম।
যদি বলি তুমি লজ্জা, লাজুক পাতার মতাে প্রিয়,
স্রিয়মাণ, তবে কেন লাজ ভেঙে শিশিরের সুস্পষ্ট ছোঁয়ায়
মধ্যরাতে জেগে ওঠো লজ্জাহীনা হয়ে
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমিও ঘৃণার যােগ্য,
লাজহীন, অসুন্দর, ভীষণ কুৎসিত এক নারী।
লজ্জা নয়, আঁখি নয়, কোমলগান্ধার নয়,
বাসন্তী-বিদিশা নয়, ক্ষুধা কিংবা ঘৃণা বলে ডাকি।
মাটির মূর্তির মতাে ভেঙ্গে ফেলি আঘাতে আঘাতে,
ঠোঁট থেকে ফিরাই চুম্বন, বাহুর বন্ধন থেকে ঠেলে দিই দূরে।
কে যেন ফেরায় তখন, প্রতিবাদ ওঠে অন্তঃপুরে।
আমি বুঝি, বড়াে লজ্জাহীন, কঠিন, নির্মম এই খেলা—
ভালােবাসা,কী নাম তােমাকে দেবাে?
তুমি তাে আমারই নাম, আমারই আঙুলে ছোঁয়া
আলিঙ্গনে বদ্ধ সারাবেলা।