উড়ন্ত ঈগল – অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়
উড়ে চলেছে নদী আকাশে আর শহর উড়ছে গ্রামের ভিতর দিয়ে ঢেকে দিয়ে ঘাসপাতা
নরমফুলের চাষ সাপঘুম জলাবাস তুলো কাপাশ শিমূল, উড়ছে ধূলোমুখ মুখোশ মানুষ
বেড়ালের থাবা নখ, রাক্ষস জিনের মানুষ কালোচুল পাকা মাথা, না-মানুষ সব উড়ে চলেছে
এক মহাজাগতিক ঘূর্ণিতে
ঘূর্ণিতে উড়ছে মধ্যরাত, আত্মত্যাগের অবসাদ পূর্ণজন্ম জন্মান্তর যোনিভ্রমনের রসায়ন,
বাহান্ন তাসের খেলা যে জীবন যাপন উড়ে যায় ঋতুবদলের হাওয়ায়, মনোবিকারের
সকালে ঝিম্ দুপুরে শোনে শবযাত্রার সেই ধ্বনি, বীজনাম হয়ে অক্ষর জপের মালায় শান্ত
সন্ধ্যায়, মন্ত্রের মতো আঙুলে আঙুলে হাজার হাজার মোমবাতি জ্বলে দেয় এক মৌন
পাহাড়ে, অলৌকিক সে পাহাড় ডানা মেলে উড়ে যায় রূপ মহলের অন্ধকারে, স্বপ্নের
স্নায়ুঘরে জ্যোত্স্না গড়ায় উন্মাদ, নিশিরাতে ঘুমপরিকে ডাকে রাত্রিপ্রেমিক সেই কবি
চন্দ্রাহত রাতে খুলে যায় কপাটভূমি মেঘ-মাইহারে, গানের ভিতর দিয়ে উড়ে যায় একাকী
ভ্রমণ অবাক বিস্মরণ, জেগে ওঠে কবিতার মুখ বৃষ্টি চুমুক জলে ভিজে ওঠা মেঘদর্পণ,
নৌকা কাগজ জলে মেঘডুব চান, মেঘের ভিতর দিয়ে উড়ে যায় চাঁদ, উন্মাদ কক্ষ খুলে
নেমে আসে পরমা বিষাদ অপেক্ষার নারী, স্মৃতিজর্জর সাতাশ উনিশ-কুড়ি বারো সাত
পাঁচ, স্বপ্নের ঘিলু চাটে চাঁদ নেমে এলে বিষ, মাথারা ভিতর বিষাপোকা বিষহরি মন্ত্র জপে,
মৃত্যুর নীল আলো জ্বেলে লিখে চলে কবিতার ভাষা স্তব্ধতা
এমন এক ছবি-দৃশ্য-আলেখ্য-র মাঝে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন ঘুমের আলোছায়ায় লিখে যায় এক না
বলা কথার যাপন অথবা মৃত্যুর সাথে চেনাশোনা, স্বপ্নের খাতা ভরে হ্যালুসিনেশন, কানায়
কানায় সঙ্গীত মূর্ছনা আনন্দ বেদনাবিস্ময়, স্নায়ু-শিহরনে এক শবানুগমন ছবি ধরে রাখে
স্মৃতি, এক অপার শূন্যতায় গণিত নির্ভুল পিরামিড, মৃতের ভুবন, মমির মতো মৃত মুখ
ছুঁয়ে উড়ে যায় শোকের দীর্ঘ খোলা চুল, উড়তেই থাকে হাওয়ার ভেতরে উড়ো পাতা
দীর্ঘশ্বাস, কবর ছায়ায় বসে লিখে যায় নেশারাত শ্মশান মুগ্ধতা
তীব্র নেশালোকে উড়ে চলে অক্ষর কাগজ ধ্বনি শিস্ মনোলগ, সাইকিক কুয়াশায় উড়ন্ত
গোলক, উড়ে যায় প্রেম ঈর্ষা ঘুম, প্রেমিকার মুখ পুতুল মানুষ ছাউনি ঘর, শূন্যের ভেতর
উল্কা নক্ষত্র ছায়াপথ, আর এক একটি ভুল ঠিকানায় নেমে এলে হাজার হাজার বছর হয়
বরফের দেশে নির্বাসন-