Uronto Sob Jokar Kobita Srijato উড়ন্ত সব জোকার – শ্রীজাত
আকাশ বড় কৃপাসিন্ধু। ঝাকাস রােদে উড়ন্ত সব জোকার
বেকার ছিলাম অ্যাদ্দিন, আজ কাজ পেয়েছি গায়ের গন্ধ শোঁকার
নতুন-নতুন ছেলেমেয়ের শরীর কেমন গােছানাে, ফুরফুরে
পাক ধরেছে দাবার ছকে, ডাক পড়েছে যাবার, দূরে দূরে
ট্রাম-বাসে খুব ঝক্কি। তাও লক্ষ্মীছেলের ভাব করে ভিড় ঠেলি
বাতাস বড় করুণাময়। সাতাশ বছর পাঁউরুটিতে জেলি
পার করে আজ হ্যামবার্গার। ঘ্যাম বেড়েছে শ্যামসোহাগী রাধার
ঘুম আসে না। বালিশ থেকে নালিশ জানায় রংবেরঙের ধাঁধা
জীবন তবু প্রেমদিওয়ানা। পাহাড়ি পথ…পিছু নিয়েছে পুলিশ…
এবং গাড়ি ধাক্কা খাবেই। স্বপ্ন ভাঙবে গম্ভীর আব্বুলিশ
উঠে দেখব ছাঁটাই হওয়া দেবদূতেরা জল মেশাচ্ছে বিষে
কিন্তু করার কিচ্ছুটি নেই। অ-এ অজগর ঘুমােচ্ছে কার্নিশে-
ঘুমােক। ওকে ডাকব না আর। রাখব না আর কারাের কোনও কথা
দরজাগুলাে আটকাব আর ধাক্কাব আর পাক খাব অযথা
চলার পথে কলার খােসা। গলায় তবু কলার তােলা রােয়াব।
রামছাগলের গামছা খােলায় ব্যস্ত থাকুক আমার যত খােয়াব
খেয়াল ঢাকুক ঠুমরি দিয়ে, দেয়াল ঢাকুক মিষ্টিপানের পিকে
কী ভাববে কে জানে, আমি কাব্যে নামাই বন্ধুর ছাত্রীকে
বেড়াল শুকোক ছাদের তারে। হাতের মুঠোয় ছুটে মরুক ইদুর
ছিটকে এসে জামায় লাগুক একের পর এক বান্ধবীদের সিঁদুর-
ভ্রূক্ষেপ করছি না। আমার প্রেমদিওয়ানা জীবন তাে ঝকমকে,
উড়ন্ত সব জোকার, তাদের নােংরা পালক ছড়িয়ে আছে রকে…
আস্তে-আস্তে কুড়ােই, কিন্তু ফুরােই না এই অসভ্যতার খেলায়
সিড়ির মুখে বিড়ি ধরাই, ছিরির লড়াই গুরুতে আর চ্যালায়
ধুশশালা-সব ফালতু। ওসব ধান্দাবাজির বান্দা আমি নই
মুখের ওপর দরজা বন্ধ, বুকের ওপর উল্টে রাখা বই…
দিনের পরে দিন যে গেল একইরকম বৈশাখে-আশ্বিনে
আবার ভাবি মদ খাব না। আবার গড়াই ভদকা থেকে জিনে
মন্দেভালােয় সন্ধে কাটে। সকাল থেকেই চলছে ঢুকুঢুকু
ব্যাঙ পালাল ছিপ হাতিয়ে, ঠ্যাঙ তুলেছে নিজের পােষা কুকুর
কিন্তু আমি খুব ঘুমােচ্ছি। দু’ চোখ থেকে খসে পড়ছে তারা
ঘুমের ভেতর মুখ বাড়াচ্ছে গােটাদুয়েক খাপছাড়া চেহারা
‘জীবন কিন্তু প্রেমদিওয়ানা, সাবধানে তার গায়ের গন্ধ শুঁকো-‘
বলছে আমায় উড়ন্ত দুই পাগলা জোকার-দেরিদা আর ফুকো।